প্রত্যয় ডেস্ক: দেশের দুই জেলা কুড়িগ্রাম ও জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও আরেক জেলা গাইবান্ধায় বন্যার পরিস্থিতি এখনও অপরিবর্তিত রয়েছে। এ জেলায় ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি এখনও বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
কুড়িগ্রাম : ব্রহ্মপুত্র, ধরলার পানি কমতে শুরু করায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, চিলমারী ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি এখনও বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কমেছে তিস্তা, দুধকুমারসহ অন্য নদনদীর পানিও। বন্যাকবলিত এলাকার ঘরবাড়ি থেকে পানি নেমে না যাওয়ায় দুর্ভোগ কমেনি বানভাসিদের। ত্রাণ স্বল্পতার কারণে এসব এলাকায় খাদ্য সঙ্কট বেড়েই চলেছে।
অন্যদিকে ঘরবাড়ি তলিয়ে থাকা পরিবারগুলো পাকা সড়ক, বাঁধ ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এসব পরিবারের ঘরবাড়ি থেকে বন্যার পানি সরে না যাওয়ায় তারাও ঘরে ফিরতে পারছে না। বন্যা দুর্গত এলাকায় চলছে গো খাদ্যের সঙ্কট। কাঁচা-পাকা সড়ক তলিয়ে থাকায় বিচ্ছিন্ন রয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থাও। জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম জানান, কুড়িগ্রামে নদনদীর পানি হ্রাস পাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বন্যাকবলিতদের জন্য সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ অব্যাহত রয়েছে।
জামালপুর : যমুনা নদীর পানি হ্রাস পাওয়ায় জামালপুরে বন্যার সার্বিক পরিস্থিতির বেশ উন্নতি হয়েছে। এ বন্যায় জেলার সাতটি উপজেলার ৪৯টি ইউনিয়নের ৩৫১টি গ্রামের ৩ লাখ ৯৬ হাজার ৭৪৪ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যমুনা নদীর পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৭ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়ে সোমবার বিকাল ৩টায় বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস জানায় বন্যার কারনে ৯৬ কিলোমিটার কাঁচা এবং ১৭ কিলোমিটার পাকা রাস্তা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়াও বন্যার কারণে ৩ কিলোমিটার বাঁধের আংশিক ক্ষতি হয়েছে।
ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় ৩৬৯টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অপরদিকে বন্যার পানির কারণে ৬ হাজার ৩৯৩টি বাড়ি ঘরের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির বেশ উন্নতি হয়েছে। তিনি বলেন জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় জন প্রতিনিধিরা বন্যার্তদের সহযোগিতা কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে লোকজন নিজ নিজ বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছে।
গাইবান্ধা : ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি এখনও বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত হয়েছে। জেলার সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোর মানুষ এখনও শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, জ্বালানি ও গো-খাদ্যের সঙ্কটে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। বিশেষ করে বন্যায় কর্মহীন হওয়ার কারণে শ্রমজীবী মানুষগুলোর মধ্যে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, সোমবার ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার এবং ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমার মাত্র ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলার সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি ও সদর উপজেলার ২৬টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়ে পড়ায় ১ লাখ ২২ হাজার ৩২০ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া বন্যায় প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এতে চীনা বাদাম, আউশ ধান ও পাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।